spot_img

বাংলাদেশে ডেঙ্গুর ভয়াবহ প্রাদুর্ভাবে ৪০০-রও বেশি মৃত, পাকিস্তান সাহায্যের প্রতিশ্রুতি

বাংলাদেশ ডেঙ্গুর ভয়াবহ সংকটে পড়েছে, যেখানে বাড়তে থাকা কেস, দীর্ঘায়িত বর্ষা ও ভারী বৃষ্টিপাতের মধ্যে ৪০০-রও বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে; পাকিস্তান সাহায্যের হাত বাড়িয়েছে।

ঢাকা (দ্য থার্সডে টাইমস) — বাংলাদেশে ডেঙ্গুর মারাত্মক প্রাদুর্ভাব চলছে, এ বছর ৪০০-রও বেশি মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে, এবং হাসপাতালে রোগীদের স্রোতে চাপ সামাল দিতে হিমশিম খাচ্ছে। তাপমাত্রা বৃদ্ধির সাথে সাথে দীর্ঘায়িত বর্ষা এবং ঘন জনসংখ্যা মশার প্রজননকে ত্বরান্বিত করছে, যার ফলে ডেঙ্গু ভাইরাস দেশের বিস্তৃত এলাকায়, বিশেষত ঢাকায় ছড়িয়ে পড়ছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর (ডিজিএইচএস) রবিবারে প্রায় ১,৪০০ নতুন রোগী হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার খবর দিয়েছে, যার ফলে জানুয়ারি থেকে এ পর্যন্ত মোট প্রায় ৮০,০০০ ডেঙ্গু কেস রেকর্ড করা হয়েছে।

এন্টোমোলজিস্টরা আবহাওয়ার অনিয়মিত পরিবর্তনকে এই বৃদ্ধির কারণ হিসেবে উল্লেখ করেছেন, অক্টোবর মাসের ভারী বৃষ্টিপাতে এডিস মশার জন্য আদর্শ প্রজনন ক্ষেত্র তৈরি হয়েছে। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক কবিরুল বাশার সারা বছরব্যাপী মশা নিয়ন্ত্রণের পদক্ষেপ গ্রহণের প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্ব আরোপ করেছেন। অন্যদিকে, স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা বলেছেন, প্রাথমিক সনাক্তকরণ এবং মশা নিয়ন্ত্রণ এই সংকট সামাল দেওয়ার ক্ষেত্রে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কারণ হাসপাতালগুলো ইতিমধ্যে গুরুতর অবস্থায় থাকা রোগীদের সেবা দিতে হিমশিম খাচ্ছে।

জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব

বিশেষজ্ঞদের মতে, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বর্ষাকালের সময় বৃদ্ধি পেয়েছে, যার ফলে দীর্ঘমেয়াদী স্যাঁতসেঁতে পরিস্থিতি মশার প্রজননকে সহায়ক করে তুলেছে। পূর্বে, বাংলাদেশে ডেঙ্গু মূলত জুন-সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সীমাবদ্ধ থাকতো, তবে এ বছর নভেম্বর পর্যন্ত কেসের ধারাবাহিকতা দেখা যাচ্ছে। বিশিষ্ট চিকিৎসক ডাঃ এ বি এম আবদুল্লাহ উল্লেখ করেছেন, প্রাথমিক সনাক্তকরণ এবং প্রতিরোধমূলক পদক্ষেপ গ্রহণের মাধ্যমে মৃত্যুর হার অনেকাংশে কমানো সম্ভব। স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা জনস্বাস্থ্য সচেতনতা বৃদ্ধির উদ্যোগ নিচ্ছেন এবং মশার জাল, রিপেলেন্ট ব্যবহার এবং জমে থাকা পানি পরিষ্কারের মাধ্যমে ডেঙ্গু প্রতিরোধের উপর গুরুত্ব দিচ্ছেন।

বাংলাদেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থায় চাপ

অভূতপূর্ব সংখ্যক ডেঙ্গু কেস বাংলাদেশের স্বাস্থ্য পরিকাঠামোর উপর চরম চাপ সৃষ্টি করেছে। বিশেষ করে ঢাকার হাসপাতালগুলোতে রোগীর চাপ অত্যন্ত বেশি, অনেক রোগী চিকিৎসার জন্য দূর-দূরান্ত থেকে ঢাকায় আসতে বাধ্য হচ্ছেন। সঠিক সময়ে চিকিৎসা না পাওয়া উচ্চ মৃত্যুর হারের একটি প্রধান কারণ, কারণ অনেক গ্রামাঞ্চলের রোগী সাধারণত উপসর্গ গুরুতর হওয়ার পরই চিকিৎসা নিতে আসেন। এই সমস্যার সমাধানে স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা প্রাথমিক সনাক্তকরণ এবং চিকিৎসার জন্য অতিরিক্ত সম্পদ সরবরাহের উদ্যোগ নিচ্ছেন, বিশেষ করে ঢাকার বাইরের অঞ্চলে।

পাকিস্তানের সাহায্য প্রতিশ্রুতি

সংকট আরও তীব্র হওয়ায়, পাকিস্তান এগিয়ে এসে সহায়তার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরীফ বাংলাদেশের সাথে সংহতি প্রকাশ করেছেন এবং প্রাদুর্ভাব নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বাংলাদেশে ডেঙ্গুর রেকর্ড সংখ্যক কেস দেখা গেছে, ২০২৩ সালে ১,৭০০-রও বেশি মৃত্যুর ঘটনা রেকর্ড করা হয়েছে। জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা ডেঙ্গু প্রতিরোধে উন্নত ভেক্টর নজরদারি এবং আন্তঃসীমান্ত সহযোগিতার প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দিচ্ছেন, কারণ জলবায়ু পরিবর্তন দক্ষিণ এশিয়া জুড়ে ভেক্টর-বাহিত রোগের ঝুঁকি বাড়াচ্ছে।

বাংলাদেশে চলমান ডেঙ্গু প্রাদুর্ভাবে মূল্যবান প্রাণের ক্ষতিতে গভীর শোক প্রকাশ করে, পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরীফ এই কঠিন সময়ে বাংলাদেশের জনগণের প্রতি আন্তরিক সংহতি প্রকাশ করেছেন। তিনি যে কোনো ধরনের সহায়তা প্রদানের জন্য পাকিস্তানের প্রস্তুতির কথা জোর দিয়ে বলেছেন, এবং এই সংকট মোকাবিলায় বাংলাদেশি “ভাই-বোনদের” পাশে থাকার অঙ্গীকার করেছেন।

LEAVE A COMMENT

Please enter your comment!
Please enter your name here
This site is protected by reCAPTCHA and the Google Privacy Policy and Terms of Service apply.

The reCAPTCHA verification period has expired. Please reload the page.

spot_img

خبریں

The latest stories from The Thursday Times, straight to your inbox.

Thursday PULSE™

More from The Thursday Times

error: